
পৃথিবীর ক্রমশ ডিজিটাল বিশ্বায়নের সাথে সাথে বাংলাদেশও ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে । এরই ধারাবাহিকতায় চলছে নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন । আলোচ্য প্রযুক্তি ভাণ্ডারের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল মুঠোফোন (Mobile Phone)। এই মুঠোফোন বিশ্বকে এনে দিয়েছে মানুষের হাতের মুঠোয় । আর এই মুঠোফোন (Mobile Phone) এর একটি অংশ হল Realme ব্রান্ড । এই Realme ব্রান্ড এর করা ২টি মডেল “রিয়েলমি C15 (Realme C15)” এবং রিয়েলমি C15 কোয়ালকম এডিশন (Realme C15 Qualcomm Edition)।

আজ আমরা রিভিউ করতে চলেছি এই রিয়েলমি C15 কোয়ালকম এডিশন (Realme C15 Qualcomm Edition) সম্পর্কে। 2020 তে বাজারে আসা এই নতুন মডেলটিতে আগের তুলনায় কি কি নতুন সংযোজন করা হয়েছে, কি কি বাদ দেওয়া হয়েছে, প্রসেসর এবং বডি সম্পর্কে, এর সুবিধা ও অসুবিধাসমুহ, আর সর্বোপরী মুঠোফোন (Mobile Phone) কাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী অর্থাৎ কারা কিনবেন সে সম্পর্কে থাকছে আমাদের নিজেস্ব মতামত। তাহলে চলুন শুরু করা যাক…
সংক্ষিপ্ত বিবরন:

2020 সালের নভেম্বর এর শুরুর দিকে বাংলাদেশের বাজারে নতুন লঞ্চ করে “রিয়েলমি C15 কোয়ালকম এডিশন (Realme C15 Qualcomm Edition)”। এর দাম নির্ধারন করা হয়েছে
4GB+64GB | 12,990 টাকা |
4GB+128GB | 14,490 টাকা |
চোখ বুজে বলতে পারি মুঠোফোনটিকে ( Mobile Phone) প্রথমবার দেখলে দ্বিতীয়বার আবার ফিরে তাকাতে হবে। ১২,৯৯০ টাকা দামে এতটা নজরকাড়া ডিজাইন সত্যিই দুর্লভ। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বত্রই মুঠোফোন (Mobile Phone) পাওয়া যাচ্ছে।
বিস্তারিত বিবরন:
ডিজাইন ও বডি:
চায়না কোম্পানি রিয়েলমি (Realme) ২০২০ সালের ০৯ নভেম্বর এ তাদের ব্রান্ড নিউ ফোন রিয়েলমি C15 কোয়ালকম এডিশন (Realme C15 Qualcomm Edition) ঘোষণা করেছিল। এই মডেলটিতে ডিজাইনের দিক দিয়ে কোম্পানি কোন ত্রুটি রাখে নি। সত্যি বলতে ১২,৯৯০ টাকা দামে এতটা প্রিমিয়াম আর নজরকাড়া ডিজাইন খুব কমই দেখা যায়। এর ব্যাক পার্টের ডিজাইনের কারনে মোবাইল ফোনটাকে দেখতে অসাধারন লাগে।

মোবাইলটির দৈর্ঘ্য 164.5 mm, প্রস্থ 75.9 mm এবং থিকনেস 9.8 mm। যেটা হাতে ধরতে বেশ কম্ফোর্টেবল । এর সামনে গ্লাস এবং বডি প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। এর সামনে অর্থাৎ ডিসপ্লে এর ঠিক উপরে মাঝ বরাবর একটি টাইপ ভি এর নচ রয়েছে এবং ফোনটির পিছনে অর্থাৎ ব্যাকপার্টের উপরে বাম পাশে বর্গাকার আক্ৃতির ক্যামেরা বাম্প বসানো হয়েছে যেটা দেখতে বর্তমান সময় খুবই স্বাভাবিক। এর পাওয়ার অন অফ বাটন ও ভলিউম আপ/ডাউন বাটন ডিসপ্লে এর ডান পাশে এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটিকে ব্যাকপার্টের উপরের দিকে সেট করা হয়েছে। যেগুলো আসলেই বেশ সুবিধাজনক স্থানে দেওয়া হয়েছে। ফোনটির নিচের দিকে দেয়া হয়েছে 3.5 mm এর অডিও জ্যাক, মাউতস্পিকার (Mic) এবং লাউডস্পিকার। আর ফোনটির উপরে ফ্রন্ট ক্যামেরার উপরে দেয়া হয়েছে ইয়ারস্পিকার

মোবাইলটি বাজারে 2 টি রঙে পাওয়া যায়। রংগুলি পাওয়ার ব্লু ( Power Blue ) এবং পাওয়ার সিলভার ( Power Silver )।
ডিসপ্লে:
ফোনটিতে রয়েছে ৬.৫ ইঞ্চি আইপিএস এলসিডি ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন সমৃদ্ধ 16M color সাপোর্টেড ভি-টাইপ নচ যুক্ত ডিসপ্লে । ডিসপ্লেটির 270 এর পিপিআই সহ 720 x 1600 পিক্সেলের রেজোলিউশন রয়েছে যেটা এইচডি প্লাস ডিসপ্লে । ডিসপ্লেটিতে পাবেন স্মুত টাচ রেসপন্স এবং অসাধারন মিডিয়া ভিউএর অভিজ্ঞতা ।
সেন্সর:

ফোনটিতে সেন্সর হিসেবে থাকছে অ্যাক্সিলোমিটার, ম্যাগ্নেটমিটার, গাইরো, প্রক্সিমিটি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, জিপিএস ও লাইট সেন্সর। রিয়ার-মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্টটি বেশ নির্ভুল ও দ্রুত কাজ করে। ফেস আনলকও প্রায় সঠিক ও দ্রুত কাজ করে।
নেটওয়ার্ক:

ফোনটিতে রয়েছে একই সাথে ২টা ন্যানো সিম এবং ১টি মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যাবহার এর সুবিধা। ফোনটি 3 জি এবং 4 জি নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুবিধা দিবে। তাছাড়া জিপিআরএস এবং ইডিজিই সুবিধাও রয়েছে । এর নেটওয়ার্ক স্পীড হিসেবে থাকছে এইচএসপিএ 42.2 / 11.5 এমবিপিএস, এলটিই-এ। যেটা এই বাজেটের ফোনের জন্য বেশ সুবিধাজনক।
পারফরমেন্স:

ফোনে অ্যান্ড্রয়েড 10 (Q) কে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে । এতে রিয়েলমি এর নিজস্ব ইউআই realme UI 1.0 ব্যাবহার হয়েছে যেটা আপনাকে এক অসাধারন ইউজার ইন্টারফেস এর অভিজ্ঞতা দিবে । এর প্রসেসর হিসেবে কর্টেক্স এর অক্টা-কোর (4 × 1.8 গিগাহার্টজ ক্রিও 240 এবং 4 × 1.6 গিগাহার্টজ ক্রিও 240) প্রসেসর ব্যাবহার করা হয়েছে।
র্যাম এবং রম:
রিয়েলমি (Realme) কোম্পানি ( 3 জিবি / 32 জিবি ) এবং( 4 জিবি / 64 জিবি ) এবং( 4 জিবি / 128 জিবি ) -র 3 টি ভেরিয়েন্টে ফোনটি চালু করেছে। গেমিং, গ্রাফিক্স এবং র্যামের ক্ষেত্রে মোটামুটি ভাল। সাধারণ গ্রাফিক্স গেমগুলি সহজেই চালানো যায়। তবে বর্তমান এর সেরা গ্রাফিক্স গেম গুলো লো-গ্রাফিক্সে খেললে বেশ ভালো পারফরমেন্স আশা করা যায় অন্যথায় ফ্রেমড্রপ, গরম হওয়া, ল্যাগিং বা হ্যাং সহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
ক্যামেরা:

ফোনের পিছনে কোয়াড ক্যামেরা সেটআপ রয়েছে যার মেইন ক্যামেরা হিসেবে 13 এমপি f/2.2 এপাচার+ 8 এমপি আলট্রা ওয়াইড সেন্সর+ 2 এমপি ম্যাক্র সেন্সর+ 2 এমপি ডেপ্ত সেন্সর সেন্সর যুক্ত ক্যামেরা রয়েছে যার সাহায্যে আপনি সুন্দর মানের ছবি এবং সর্বোচ্চ 1080p @ 30fps ভিডিও রেকর্ড করতে পারবেন । এছাড়া এর সেলফি ক্যামেরা হিসেবে ফ্রন্ট এ রয়েছে 8 এমপি সেলফি ক্যামেরা যার সাহায্যে আপনি সুন্দর মানের ছবি এবং সেলফি তুলতে পারেন। আপনি সামনের ক্যামেরা দিয়ে সর্বোচ্চ 1080p @ 30fps ভিডিও রেকর্ড করতে পারেন।
ব্যাটারি:

মোবাইলটিতে নন-রিমুভয়্যবল লিথিয়াম পলিমার এর 6000 এমএএইচ ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। যার সাহায্যে আপনি গড়ে 155 ঘন্টা অবধি স্বাভাবিক ভাবে চালাতে এবং 18 ঘন্টা নেট ব্রাউজিং করতে পারবেন। পুরো চার্জে, আপনি 3G নেটওয়ার্কে এ প্রায় 35 ঘন্টা পর্যন্ত কথা বলতে পারেন। ফোনটি পুরো চার্জের প্রায় 1.4 ঘন্টা সময় নেবে 18W দ্রুত চার্জিং সাপোর্টে।
রিয়েলমি C15 কোয়ালকম এডিশন (Realme C15 Qualcomm Edition) এর বাংলাদেশী দাম :
বাংলাদেশে এই ফোনটির দাম হয়েছে 4GB+64GB- 12,990 Tk টাকা ও 4GB+128GB- 14,490 Tk। বাজেট বিবেচনা করে, আমি আশা করি এটি দুর্দান্ত ফোন হবে।
এবার আসি মূল সুবিধা ও অসুবিধার দিকে…
যে কোন জিনিসের ভাল এবং মন্দ দুইটা দিক থাকে। প্রথমে খারাপ দিকগুলো অর্থাৎ অসুবিধাসমুহ জেনে নেয়া যাক।
অসুবিধাসমুহ:
বডি:
এর বডি প্লাস্টিক এর হওয়ায় এতে সহজে দাগ পড়ে যায় । এজন্য সবসময় ব্যাক কভার ব্যাবহার করুন।
ডিসপ্লে:
এর ডিসপ্লে তে নিম্ন মানের প্রটেক্টিভ গ্লাস দেওয়ায় এর ডিসপ্লে এবং টাচ একটা ঝুকির মধ্যে থাকে ,যেকোনো সময় পড়ে ভেঙ্গে যেতে পারে টাচ ডিসপ্লে । তাই কোনো প্রটেক্টিভ গ্লাস ব্যবহারের অনুরোধ রইল ।
পারফরমেন্স:
বর্তমান এর সেরা গ্রাফিক্স গেম গুলো সাধারন গ্রাফিক্সে খেললে বেশ ভালো পারফরমেন্স আশা করা যায় অন্যথায় ফ্রেমড্রপ, গরম হওয়া, ল্যাগিং বা হ্যাং সহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
সুবিধাসমুহ:
অনেক তো বদনাম শুনলেন এবার ভাল দিকগুলোও জেনে নেওয়া যাক…
ডিজাইন:
এক কথায় অসাধারন। মন জুড়িয়ে যাবার মত ডিজাইন। প্রথমবার তাকালে দ্বিতীয়বার ফিরে তাকানোর মত একটা ডিজাইন।
ডিসপ্লে:
ফোনটিতে রয়েছে ৬.৫ ইঞ্চি আইপিএস এলসিডি ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন সমৃদ্ধ 16M color সাপোর্টেড ডিসপ্লে । এইচডি প্লাস এবং বড় ডিসপ্লে হওয়ায় ডিসপ্লেটিতে পাবেন অসাধারন এক মিডিয়া ভিউএর অভিজ্ঞতা ।
সাউন্ড:
ফোনটির নিচের দিকে দেয়া হয়েছে ৩.৪ এর অডিও জ্যাক, মাউতস্পিকার (Mic) এবং লাউডস্পিকার। আর ফোনটির উপরে ফ্রন্ট ক্যামেরার উপরে দেয়া হয়েছে ইয়ারস্পিকার, যে গুলোর সাউন্ড কোয়ালিটি সত্যিই প্রশংসনীয় ।
স্টোরেজঃ
এতে থাকছে ১২৮ জিবি পর্যন্ত স্টোরেজ এর সুবিধা
ব্যাটারি:
মোবাইলটিতে নন-রিমুভয়্যবল লিথিয়াম পলিমার এর 6000 এমএএইচ এর বড় ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। যার সাহায্যে আপনি গড়ে 155 ঘন্টা অবধি স্বাভাবিক ভাবে চালাতে এবং 18 ঘন্টা নেট ব্রাউজিং করতে পারবেন। পুরো চার্জে, আপনি 3G নেটওয়ার্কে এ প্রায় 35 ঘন্টা পর্যন্ত কথা বলতে পারেন।
📱💦 এছাড়া এতে রয়েছে স্বাভাবিক বা সামান্যতম পানি নিরোধক ব্যাবস্থা।

যাদের জন্য এই ফোনটি:
যারা সাধারণ কোন কাজের জন্য বা মিডিয়া ভিউয়ের জন্য বা ইন্টারনেট ব্রাউজিং অথবা, যারা সামান্য গেম খেলার জন্য ফোন কিনতে চাচ্ছেন তাদের জন্য বেস্ট ফোনগুলোর মধ্যে “রিয়েলমি C15 (Realme C15)” একটি । এছাড়া নরমাল গ্রাফিক্স এর গেমিং সুবিধাও থাকছে।
আমার নিজেস্ব মতামত:
আমার মনে হয় এতে যে প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে সেটি অনেক ভাল মানের। সব দিক বিবেচনা করে আপনি যদি সাধারণ ব্যাবহারকারী এবং মিডিয়া প্রেমি হন আর দামটা যদি খুব একটা ম্যাটার না করে তবে নিঃসন্দেহে হতে পারে এই মোবাইলটি আপনার পছন্দের শীর্ষে থাকা একটি মোবাইল।
আর আপনি যদি একটি মোবাইল কিনবেন বলে চিন্তা করে থাকেন আর বাজেট যদি হয় এই দামের আশেপাশে তবে চোখ বন্ধ করে এই মোবাইলটি কিনতে পারেন। আশা করি, আপনার মোবাইলটি সম্পর্কিত মনের সমস্ত আশাগুলো এই রিভিউ ব্লগ এর মাধ্যমে পূরন করতে সক্ষম হয়েছি।
দীর্ঘদিন ধরে রিয়েলমি, মোবাইল প্রেমীদের পছন্দের শীর্ষে থাকা একটি নাম। ব্যক্তিগতভাবে রিয়েলমি নাম শুনলে আমার মাঝেও একটা দুর্বলতা কাজ করে। যেহেতু আগেও রিয়েলমির বেশ কয়েকটা মডেল বাজারে এসে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে সেই ধারাবাহিকতায় এই মোবাইলটিও সকল মোবাইল ব্যাবহারকারীদের মন জয় করে তাদের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পরবে।
BDPrice.com.bd পরিবারের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আমাদের ফেসবুক পেজ BD Price।
If some one desires to be updated with latest technologies after that he must be visit this
web page and be up to date everyday.